কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে গোলরক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় ছিল অ্যালিসন বেকার, ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, থিবো কোর্তোয়া কিংবা এমি মার্টিনেজদের নাম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউ ঘুণাক্ষরেও হয়ত ভাবেনি দমিনিক লিভাকভিচের নাম। ক্রোয়েশিয়ার ২৭ বছর বয়সী গোলরক্ষকের নামটাও খুব কম লোকই হয়ত জানত। অথচ, বিশ্বকাপের শেষের দিকে এসে তুমুল আলোচনায় ডায়নামো জাগরেবের এই গোলরক্ষক।
সেমিফাইনালে মেসি-মার্টিনেজদের লড়তে হবে দুর্দান্ত লিভাকভিচের বিপক্ষে। ক্রোয়েশিয়ার গোলবারের সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন মহাপ্রাচীরের ন্যায়। তার সামনে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডরা যেন সম্মোহিত হয়ে যান। তিনি যেখানে, যেভাবে চান, যেন সেভাবেই বল হাতে তুলে দেন ফরোয়ার্ডরা। দুহাত প্রসারিত করে যখন গোলপোস্ট আগলে ধরেন, তখন পোস্টে বল ঢুকানোর জায়গা খুঁজে পায় না প্রতিপক্ষ। ম্যাচ জিততে হলে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগকে পেরুতে হবে লুভাকভিচ দেয়াল।
গ্রুপ পর্বে রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোয় পা রাখা ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে উঠে আসার পেছনে বড় কৃতিত্ব লিভাকভিচের। টানা দুই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের নায়ক তিনিই। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে প্রতিপক্ষের নেওয়া কামানের গোলার মতো শটগুলো ঠেকিয়েছেন তো বটেই, ম্যাচজুড়েও চীনের মহাপ্রাচীরের মতো আগলে রেখেছেন গোলপোস্ট।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে তো লুভাকভিচ একাই রুখে দিয়েছেন ব্রাজিলকে। মরুপ্রান্তরে ব্রাজিলের দুর্দান্ত ফরোয়ার্ডদের একের পর এক আক্রমণ থেমে গেছে লিভাকভিচ দেয়ালের সামনে। নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে নেইমার-রিচার্লিসনদের ১১টি শট থামিয়ে দেন তিনি। ১০৫ মিনিটের মাথায় নেইমার শুধু একবার ফাঁকি দিতে পেরেছেন তাকে। এরপর টাইব্রেকারে রদ্রিগোর নেওয়া প্রথম শট থামিয়ে ভেঙে দিয়েছেন ব্রাজিলের মনোবল।
লিভাকভিচ যেন পড়তে পারেন প্রতিপক্ষের আক্রমণকারীর চোখের ভাষা। গত বিশ্বকাপে সুবাচিচ যেভাবে ক্রোয়েশিয়াকে টানা দুই ম্যাচে বাঁচিয়েছেন পেনাল্টি শ্যুটআউটে, এবার সে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন লুভাকভিচ। গতবার দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে কাছে থেকে দেখেছেন কীভাবে স্নায়ুকে নিজের বশে রাখতে হয় এসব মুহূর্তে। এবার দলের নম্বর ওয়ান গোলরক্ষক হিসেবে সেই শিক্ষাটাকে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।